২১ জুলাই ‘শহিদ দিবস’ পালিত হয় কেন, কী ঘটেছিল সেদিন?
Report - Tamal Sau
বামফ্রন্ট সরকারের আমলে একজন বিরোধী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে রাজ্যের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।২১ জুলাই সাক্ষী থেকেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার রাজনৈতিক দলের নানান উত্থান পতনের কাহিনীর। বিগত কয়েক দশক ধরেই এই দিনটিকে তৃণমূলের অঘোষিত রাজনৈতিক সমাবেশ হিসেবে মনে করে রাজনৈতিক মহল।
২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট সরকারকে ফেলে দিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল কংগ্রেস তারপর থেকে কেবলমাত্র এই দিনটিকেই তারা যথাযথ মর্যাদার সাথে পালন করে আসছে এখনো পর্যন্ত।
ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন একুশে জুলাই দিন থেকে শহীদ দিবস হিসেবে পালন করবে তৃণমূল কংগ্রেস। তবে এই একুশে জুলাই দিনটির সাথে তৃণমূল কংগ্রেসের সরাসরি কোন সম্পর্ক নেই। বা বলা যেতে পারে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থানের আগেই এই একুশে জুলাই এর ঘটনা ঘটে গিয়েছিল বাংলার বুকে।বরং বলা যেতে পারে, একুশের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঠিক কী ঘটেছিল ২১ জুলাই? কেন এই দিনটিকে তৃণমূল ও কংগ্রেস ‘শহিদ দিবস’ হিসাবে পালন করে?
১৯৯৩ সালে,তখনও তৃণমূলের জন্ম হয়নি। তখন পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে জ্যোতি বসুর সরকার। এ সময় সিপিএমের বিরুদ্ধে ছাপ্পা-রিগিং-এর অভিযোগ নিয়মিত শোনা যেতো বিরোধিদের মুখে। এমন আবহেই নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনার জন্য সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্রের দাবিতে ২১ জুলাই মহাকরণ অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রথমে এই কর্মসূচি দিন ঠিক হয়ে ছিল ১৪ জুলাই করা হবে। কিন্তু পরে কর্মসূচি পিছিয়ে ২১ জুলাই করা হয়।
১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই মমতার ডাকে মহাকরণ অভিযানের জন্য কলকাতার রাজপথে নামেন কয়েক হাজার যুব কংগ্রেসকর্মী। রাজ্যের প্রধান প্রশাসনিক সচিবালয়ে এই অভিযান রুখতে তৎপর হয় পুলিশ। বিভিন্ন ক্রসিং-এ গড়া হয় ব্যারিকেড। এরপরই হঠাৎ চলতে থাকে গুলি। সেই গুলিতে নিহত হন ১৩ জন যুবকংগ্রেস কর্মী। এই ‘শহিদ’রা হলেন- বন্দনা দাস, মুরারী চক্রবর্তী, রতন মণ্ডল, কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ রায়, অসীম দাস, কেশব বৈরাগী, শ্রীকান্ত শর্মা, দিলীপ দাস, রঞ্জিত দাস, প্রদীপ দাস, মহম্মদ খালেক, ইনু। এই ১৩ যুবকংগ্রেসকর্মীর মৃত্যুতে রীতিমতো উত্তাল হয়ে ওঠে রাজ্য রাজনীতি। কার নির্দেশে গুলি চালাল পুলিশ, এই প্রশ্নের আজও মীমাংসা হয়নি। উল্লেখ্য, সেসময় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তবে পরবর্তীকালে এ ঘটনায় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ক্নিনচিট দেয় সিবিআই।
১৯৯৩ সালের এই ঘটনার পর থেকেই প্রতিবছর এই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। পরবর্তীকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূল তৈরি করেন এবং ২১ জুলাইকে ‘শহিদ দিবসে’র মর্যাদা দেওয়া হয়। আজও এই দিনে পৃথকভাবে সমাবেশ করে কংগ্রেস। কিন্তু, তৃণমূল রাজনৈতিকভাবে এ রাজ্যে প্রশ্নাতীতভাবে বৃহত্তর শক্তি হয়ে ওঠায় তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’ই যাবতীয় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। ‘শহিদ তর্পণ’ করা হলেও বিগত কয়েক বছর ধরে, বিশেষত রাজ্যে পালাবদলের পর ২১ জুলাই তৃণমূলের কাছে একপ্রকার ক্ষমতা প্রদর্শণের মঞ্চ হয়ে উঠেছে। তবে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এ রাজ্যে বিজেপির ভরাডুবি স্বস্তি দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর দলকে। সেই প্রথা মেনে আজও পালিত হচ্ছে একুশে জুলাই। আগামী লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারের ‘শহিদ মঞ্চ’ থেকে মমতা কী বার্তা দেন, সে দিকেই তাকিয়ে সমগ্ৰ রাজনৈতিক মহল।
0 মন্তব্যসমূহ