জাহাঙ্গীর বাদশার রিপোর্ট:অমরদা ভালো নেই, অমরদা অসুস্থ.....খবরটা ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি । কলকাতা তথা দক্ষিণ ২৪ পরগণার সংবাদজগতে অত্যন্ত পরিচিত এবং জনপ্রিয় প্রবীণ সাংবাদিক, সকলের প্রিয় "অমরদা" । অমর নস্কর । বর্তমানে তিনি চিকিৎসা করানোর জন্য রয়েছেন মুম্বাইতে । টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে নাম রেজিষ্ট্রেশন করানো, হোটেলের ব্যবস্থা করা, হাসপাতালে দৌড়াদৌড়ি করা, সবকিছুই সামলাচ্ছেন ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ।
মহেশতলা সংলগ্ন সরকারপুল এলাকার গোপালপুরের বাসিন্দা অমরবাবু । স্ত্রী এবং দুই ছেলেকে নিয়ে তাঁর সংসার । দুই ছেলেই ছোটখাট প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করেন । প্রথমে সরকারপুল মেন্টাল হসপিটালে চাকরি করতেন অমরবাবু । পরবর্তীকালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে ২০০০ সালে সাংবাদিকতার জীবন বেছে নেন তিনি । প্রকাশ করেন "দূর্বার কলম" পত্রিকা, যেটি সম্প্রতি পদার্পণ করেছে ২৪ বছরে । যাত্রাপথ, বলা বাহুল্য, খুব একটা সহজ ছিল না । কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তি, সততা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে "দূর্বার কলম"কে দূর্বার গতিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন তিনি । সম্পূর্ন একা হাতে ! তিনি অসুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও সময়, কোনও অবস্থায় একবারের জন্যও ছেদ পড়েনি দূর্বার কলমের প্রকাশনায় । ডিটিপি'র কাজ , সামান্য কিছু ডোনেশন বা বিজ্ঞাপন জোগাড় করা, সমস্ত খবরাখবর টাইপ করা , কাগজ ছাপানো এবং বিনা পয়সায় বিভিন্ন জায়গায় সেই কাগজ পৌঁছে দেওয়া-- সবই এক সময় একা হাতে সামলেছেন অমরবাবু । জেলায় যারা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়ে কাজকর্ম করেন, তাদের কিন্তু বিভিন্ন প্রতিকূলতার সামনে পড়তে হয় । যার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল "ফান্ডিং", অর্থাৎ সংবাদপত্র প্রকাশ করার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করা । অমর নস্করও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না । কিন্তু দাঁতে দাঁত চেপে তাঁর সংবাদপত্র নিয়ে তিনি তাঁর নিজের লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন ।
বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য সাংবাদিকদের নানা রকম সমস্যায় বা বিপদে তিনি পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন বড় দাদা বা বন্ধুর মতো । তাঁদের সকলের প্রিয় "অমরদা" সম্পর্কে এই বিষয়টি কৃতজ্ঞচিত্তে জানিয়েছেন অনেক সাংবাদিক ।
গলায় কিছুটা সমস্যা নিয়ে ভুগছিলেন বেশ কয়েক মাস । সম্প্রতি বজবজের জগন্নাথ গুপ্ত মেমোরিয়াল হাসপাতালে তিনি ভর্তি হন । সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষানিরীক্ষা ও বায়োপসি করার পর ক্যানসার ধরা পড়ে । পরে সমস্যা আরও কিছুটা বাড়ায় আর ঝুঁকি নেননি তাঁর পরিবারের লোকজন । তাঁর এক ছেলে তাঁকে নিয়ে রওনা হন মুম্বাই । উদ্দেশ্য , টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে আরও ভালোভাবে চিকিৎসা করানো ।
যিনি অন্যের সমস্যায় সবসময় পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাঁর এই সংকটের মুহূর্তে পিছিয়ে থাকেননি সাংবাদিক বন্ধুরাও । কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার এবিএন নিউজে'র চিফ রিপোর্টার তথা "বাংলা রিপোর্টার্স গিল্ডে"র সম্পাদক পরিমল কর্মকার এই ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছেন। তাঁর তৈরি করা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে রয়েছেন অসংখ্য সাংবাদিক । সেই গ্রুপে নিয়মিত অমর নস্করের চিকিৎসা সংক্রান্ত আপডেট দেওয়ার পাশাপাশি আহ্বান জানিয়েছেন সকলকে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ানোর জন্য । "সব সময় নিজেদের বিপদে অমরদাকে পাশে পেয়েছি । আজ এটা প্রমাণ করার সময় এসেছে যে তাঁর সংকটের সময়ও আমরা সকলে তার পাশে আছি", দৃঢ় ভাবে বললেন পরিমল কর্মকার ।
0 মন্তব্যসমূহ