Header Ads Widget

ERTERTERT

চায়ের দোকানে বইয়ের বাগান মহিষাদলের সুদীপের

 


জাহাঙ্গীর বাদশার রিপোর্ট:চায়ের দোকানে বইয়ের বাগান। কি অবাক হলেন তো। হ্যাঁ এমন ক্যাফে তৈরি করে নজর কেড়েছে মহিষাদলের যুবক সুদীপ জানা।কর্পোরেট জগতে চাকরি করার সময় অযথা বসের মানহানিকর কটুক্তি, বকুনি, পরাধীনতার চাকরি ছেড়ে নিজেকে সাবলম্বী করে তুলতে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল সুদীপ। এখন মন জুড়ানো সুস্বাদু চায়ের কাপের সাথে বইয়ের বাগান নজর কেড়েছে সকলের।


বই পড়া দিন দিন কমছে। ইন্টারনেট মোবাইল ফেসবুক ইউটিউব ইনস্টাগ্রাম এর এখন বার বাড়ন্ত তার মাঝেও এ যেন আস্ত  এক বইয়ের বাগান। তাও আবার চায়ের দোকানে। অজানাকে জানার এবং অচেনাকে চেনার এক অন্যতম মাধ্যম হলো বই। কিন্তু চায়ের দোকানে যে বইয়ের বাগান গড়ে উঠবে সেই ভাবনা ভাবিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলের তরুন যুবক সুদীপ জানা। নিজের উদ্যোগেই সুদীপ গড়ে তুলেছেন আস্ত একটি চায়ের দোকান। কিন্তু সেই চায়ের দোকানের ভেতরে প্রবেশ করলে সেটি আদৌ চায়ের দোকান নাকি বইয়ের বাগান সেই ভাবনায় বুঁদ হবেন আপনিও। 


মহিষাদলের তেরপেখ্যা গ্রামের তরুণ যুবক সুদীপ। একসময় বেসরকারি কোম্পানিতে মোটা মাইনের চাকরি করতেন তিনি। কিন্তু মনোমালিন্য হওয়ায় চাকরি ছেড়ে চায়ের দোকান করার সিদ্ধান্ত নেন সুদীপ। তবে চায়ের দোকানে অভিনবত্ব কোন কিছু করার চিন্তা মাথায় আসে তার। মা গায়ত্রী দেবী সহ বাড়ির সকলেই প্রথম থেকে বইপ্রেমী। কিন্তু বর্তমানে নতুন প্রজন্ম বই থেকে কোথাও যেন দূরে সরে চলে যাচ্ছে। ক্রমশ সোশ্যাল মিডিয়ায় বুঁদ হচ্ছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে চায়ের দোকানেই বইয়ের লাইব্রেরী গড়ার ভাবনা মাথায় আছে সুদীপের। সেই অনুযায়ী মহিষাদলের ছোলাবাড়ি প্রাঙ্গণে গড়ে তোলেন একটি চায়ের দোকান। আজ থেকে দেড় বছর আগে শ'খানেক বই নিয়ে শুরু হয় সুদীপের এই চায়ের দোকান। বর্তমানে বইয়ের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। সকাল কিংবা সন্ধ্যে সুদীপের চায়ের দোকান যেন এখন আট থেকে আশির অবসরের অন্যতম ঠিকানা। এক কলেজ ছাত্র কথায়,“সত্যিই এক অভিনব উদ্যোগ। এর ফলে আমরা অবসর সময়ে নিজেদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে পারবো।”



চায়ের দোকানে মাঝেমধ্যে বসে গান-বাজনার আসরও। তার জন্য রয়েছে গিটার। গিটারের সুরে চায়ের চুমুকে হাতে বই নিয়ে যেন এক নতুন মুহূর্তের সৃষ্টি হয় চায়ের দোকানে। রবীন্দ্রনাথ থেকে নজরুল, উইলিয়াম শেক্সপিয়ার থেকে এপিজে আবদুল কালাম সকলের বই থরে থরে সাজানো সুদীপের চায়ের দোকানে। সুদীপের এই উদ্যোগের নাম দেওয়া হয়েছে হিন্দি কবি নিরালার নামে‘নিরালা বুক ক্যাফে'। চায়ের দোকানের মধ্যে রয়েছে বিধি-নিষেধও। চায়ের দোকানে সম্পূর্ণভাবে ধূমপান নিষিদ্ধ। এছাড়াও করা যাবে না ফোন ঘাঁটাঘাঁটি।


 তার বিনিময়ে অন্তত বইয়ের একটি পাতা পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন সুদীপ। আশেপাশে বহু স্কুল কলেজ অবস্থিত। তাই নতুন প্রজন্মের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে সুদীপের এই বুক ক্যাফে। খুশি হয়ে বহু মানুষজন সুদীপের এই উদ্যোগে পাশে দাঁড়িয়েছেন। পুরনো বই দিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তারা। ইতিমধ্যে সুদীপের এই বইয়ের বাগান থেকে বহু কবি সাহিত্যিকের বই প্রকাশ অনুষ্ঠানও হয়েছে। 


সুদীপের কথায়,“ছোট থেকেই দেখে আসছি মা খুব বই পড়তে ভালোবাসেন। তবে বর্তমান প্রজন্ম বই থেকে যেন দূরে সরে যাচ্ছে। আমি যখন চাকরি ছাড়ি তখন চা দোকান করার সিদ্ধান্ত নেই। সেখানেই নতুন কিছু করার ভাবনা মাথায় আসে। তাই চায়ের দোকানে আড্ডার ছলে যাতে নতুন প্রজন্ম বইমুখী হয়ে উঠতে পারে সেই জন্য এই ধরনের উদ্যোগ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ